নতুন কমিটিতে সহ-সভাপতি হলেন শাহ আলম, খন্দকার আবু জাফর, জান্নাতুল ফেরদৌস, শামসুজ্জামান, আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, আজহারুল ইসলাম মান্নান, আব্দুল হাই রাজু, মনিরুল ইসলাম রবি, ব্যারিষ্টার পারভেজ আহমেদ, লুৎফর রহমান, যুগ্ন সম্পাদক পদে লুৎফর রহমান খোকা, এম এ আকবর, সাংগঠনক সম্পাদক পদে জাহিদ হাসান রোজেল, নজরুল ইসলাম পান্না, মাসুকুল ইসলাম রাজীব, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক উজ্জল হোসেন, অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হাসান, রুহুল আমিন, সদস্য পদে সাবেক এমপি রেজাউল করি, গিয়াসউদ্দিন, বদরুজ্জামান খান খসরু, নজরুল ইসলাম আজাদ, আতাউর রহমান আঙ্গুর ও মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপুকে রাখা হয়েছে।
কমিটির ঘোষণার পর থেকেই রূপগঞ্জের সর্বত্রই বিএনপির তৃণমূলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকেই রাজনীতি থেকে অবসর নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। জেলা ওলামাদলের সভাপতি ও রূপগঞ্জের যাত্রামুড়া এলাকার বাসিন্দা মুন্সি সামছুর রহমান খান বেনু বলেন, যেই কাজী মনিরুজ্জামান গত ৫ বছরে তারাব পৌরসভা এলাকায় একটি সভা-সমাবেশ করতে পারেনি। তাকে দেয়া হয়েছে জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব। যে দলের শীর্ষ নেতারা টাকার কাছে বিক্রি হয়ে পদ বিতরণ করে সেই দল থেকে ভাল কিছু আশা করা যায় না।
তিনি আরো বলেন, ছাগল দিয়ে হাল চাষ হলে, গরুর প্রয়োজন পড়ে না। দীর্ঘদিন ধরে রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেও তিনি কোনো নেতার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেনি। আজ টাকার বিনিময়ে জেলার র্শীষ পদটি বাগিয়ে এনেছেন। তাকে দিয়ে দলও কিছু আশা করতে পারে না। কাজী মনিরের নিজস্ব মালিকানাধীন ম্যাক্স স্যুয়েটার গার্মেন্টস মিলনায়তন ছাড়া অদ্যবধি কোনো সভা করে দেখাতে পারেনি দলকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শাহ আলম বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রামে বিন্দুমাত্র ভুমিকা ছিল না। ফতুল্লার নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক রাজনীতি ছিল তাঁর। নেই থানায় কোনো জিডি, নেই কোন মামলা। একেবারেই নিষ্প্রাণ এ নেতা এখন সহ-সভাপতি। এসি রুমে বসেই কলকাঠি নাড়েন রাজনীতিতে।
অপর সহ-সভাপতি খন্দকার আবু জাফর ও জান্নাতুল ফেরদৌস। তারা বিগত ওয়ান ইলেভেনের সময় দলকে চাঙা রেখেছিলেন। ঝুঁকি নিয়ে তখন বিএনপিকে সক্রিয় রেখেছিলেন এ দুই নেতা। সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস বিগত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক থাকলেও আন্দোলনে ছিলেন নিষ্ক্রিয়। তবে সোনারগাঁেয়র আজহারুল ইসলাম মান্নান ছিলেন আন্দোলনে। সহ-সভাপতি আব্দুল হাই রাজু মূলত সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিনের লোক।
যুগ্ন সম্পাদক লুৎফর রহমান খোকা মূলত শাহ আলমের পোষ্য হিসেবে পরিচিত। অপর যুগ্ন সম্পাদক এম এ আকবরের অবস্থাও একই ধরণের। সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম পান্না মূলত শাহ আলমের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। যিনি কয়েক বছর আগেও মনিরুল আলম সেন্টুর লোকজনের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে গুলি ছুড়েছিলেন।
সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান রোজেল এখন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক। এক সময়ে ছিলেন তুখোড় ছাত্রদল নেতা। সেই সঙ্গে ছাত্রদলের জেলা সাধারণ সম্পাদক। অপরজন মাসুকুল ইসলাম রাজীব এখনো জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক।
জেলা বিএনপির সভাপতি হয়েছেন কাজী মনিরুজ্জামান মনির। আওয়ামী লীগ নেতারা প্রায় সময়ই বলে বেড়াচ্ছেন বিএনপি দিন দিন নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। যদিও একই বক্তব্য এসেছিল কাজী মনিরুজ্জামানের কণ্ঠেও। সেটাও বছর দুয়েক আগে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা এ নেতার বক্তব্যের প্রতিফলন ঘটতেও যাচ্ছে মনে করেছেন অনেকেই।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১২ মে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের মাসদাইর বাসায় এক সভায় কাজী মনিরুজ্জামান বিএনপির বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন। বক্তব্যে কাজী মনির বলেছিলেন মে-জুন মাসে বিএনপির জানাযা হবে। এতে নারায়ণগঞ্জ জেলাসহ সব উপজেলায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ওই বক্তব্যের প্রতিবাদে পরে নারায়ণগঞ্জে কাজী মনিরুজ্জামানের বহিস্কার দাবি করে মানববন্ধন ও কুশপুত্তলিকা দাহ করে। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারির পর থেকে দেশে টানা অবরোধ ও বিভিন্ন সময়ে হরতাল শুরু হলেও এখন পর্যন্ত কোনো আন্দোলনে দেখা যায়নি কাজী মনিরুজ্জামানকে। বরং ওই বছরে বিএনপির নেতারা যখন আন্দোলনে ঘর ছাড়া, আন্দোলন করতে গিয়ে বিপর্যস্ত। তখন ২৫ জানুয়ারী বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে একটি মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাহ জাহান খান এমপি। ওই সভাতে উপস্থিত ছিলেন কাজী মনিরুজ্জামান। ঢাকার হাতিরপুল এলাকায় অবস্থিত বিজিএমইএ কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিএনপির চলমান আন্দোলনের নামে নাশকতার কারণে ব্যবসা বাণিজ্যের যে ক্ষতি হচ্ছে এর বিরুদ্ধে করণীয় সম্পর্কে ঠিক করতে, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএ ও ঢাকার শীর্ষ শ্রমিক সংগঠনগুলোর সাথে মতবিনিময় সভাতে কাজী মনিরুজ্জামান বিজিএমইএ এর সাবেক সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বক্তারা বিএনপির আন্দোলনকে চোরাগুপ্তা হামলা, জঙ্গীবাদ এমন কি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় রাজাকারদের ভুমিকার সাথে তুলনা করেন। সমাবেশে শ্রমিক সংগঠন আওয়াজ ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার সরাসরি কাজী মনিরুজ্জামানকে আক্রমন করে বক্তব্য রাখেন। তখন কাজী মনিরুজ্জামানের মুখে হাসি দেখে আরও ক্ষেপে যান নাজমা আক্তার।
মুক্তিযুদ্ধের পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন কাজী মনিরুজ্জামান। পরে ছাত্রলীগ বিভক্ত হলে তিনি জাসদ ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক হন। ঢাকসু নির্বাচনে জিএস প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। রক্তাক্ত পঁচাত্তর উত্তর রাজনৈতিক পটপরিবর্তন তার মনে পরিবর্তন নিয়ে আসে। কর্ণেল তাহের যেদিন ফাঁসিতে ঝোলেন, সেদিন তিনি যশোর কারাগর থেকে মুক্তি পান। তার মনে হয় জাসদের ভ্রান্ত রাজনীতিতে পা ফেলা ছিল তার জন্য ভুল। তিনি জাসদ রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হতে থাকেন। পরে যোগ দেন যুবদলে। এক পর্যায়ে বিএনপি ছেড়ে যোগ দেন জাতীয় পার্টিতে। জাতীয় পার্টি ছেড়ে আবার আসেন বিএনপিতে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণা করায় রূপগঞ্জের শত শত বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগে যোগদানসহ রাজনীতি থেকে অবসরে চলে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ইতিমধ্যে রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ও শিল্পপতি নুরুজ্জামান খান, উপজেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু হাসান আলেক, উপজেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজির হোসেন দেওয়ানসহ শতাধিক নেতা আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। সমালোচনার ঝড় বইছে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝেও।



Post a Comment