সর্বশেষ সংবাদ


ফতুল্লা

রূপগঞ্জ

সিদ্ধিরগঞ্জ

রূপগঞ্জে শহীদ মিনার নেই ৫৫০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে



নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ৬ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কেবল মাত্র ৫২টি শহীদ মিনার রয়েছে। এর মধ্যে মাদ্রাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কিন্ডারগার্টেন পর্যায়ে শহীদ মিনার একেবারে নেই বললেই চলে। অনেক মাদ্রাসার শিক্ষকরা শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানো পূজা বলেই মনে করেন। তাই ২১ ফেব্রুয়ারী আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নামমাত্র অনুষ্ঠান পালন করা হয়ে থাকে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে একেবারেই থাকে বন্ধ। শুধু তাই নয়, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকলেও তা অনেকটা ভগ্নদশা। বরাদ্ধ আর উদ্যোগের অভাবেই শহীদ মিনার সল্পতা রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, রূপগঞ্জের এবতেদায়ী ও দাখিল আলীম মাদ্রাসা রয়েছে ১৯টি,  কওমী মাদ্রাসা রয়েছে ২৭টি, হাফেজিয়া মাদ্রাসা ৪৭টি আর ফোরকানিয়া মাদ্রাসা ৭৪টি। এসব মাদ্রাসায় মধ্যে মাত্র ১৪টি ছাড়া আর কোনটিতে শহীদ মিনার নেই। ফলে আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবসটি পালন করা হয় না মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের। এমনকি এসব মাদ্রাসায় অধিকাংশটিতে জাতীয় সংগীতও গাওয়া হয়না। মাদ্রাসা শিক্ষকরা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণকে ‘শরিয়াহ বিরোধী’ বলে মনে করেন। শুধু জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেই দায়িত্ব শেষ করেন মাদ্রাসার শিক্ষকরা।
এ প্রসঙ্গে মুড়াপাড়া ফাতেমা-তুজ-জোহারা হাফেজিয়া মহিলা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা ইউসুফ আলী বলেন, শহীদ মিনারে ফুল দেয়ার চেয়ে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া করা উত্তম। আমরা প্রতিবছর তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে কোরআন খতমের আয়োজন করি। এদিকে, রূপগঞ্জে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১৩২টি। এসবের মধ্যে ৪/৫টি ছাড়া আর কোন স্কুলে শহীদ মিনার নেই। স্কুল প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর কোনোটির এক যুগ, কোনোটির ২৫ বছর, আবার কোনটির ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও শহীদ মিনার তৈরি করা হয়নি।
গন্ধর্বপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা জোবেদা বেগম বলেন, শহীদ মিনার নাই স্কুল শুরু থেকেই। কেন্দুয়াপাড়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাম কমল সূত্রধর বলেন, ১৯৭১ সালে স্কুল নির্মাণ হয়েছে। অথচ আজ পর্যন্ত শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। ছেলেমেয়েরা ২১ ফেব্রুয়ারীর দিন নিজেরা কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার বানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। শহীদ মিনার নেই উপজেলার ২৬০টি কিন্ডারগার্টেনেও।
কথা হয় গোলাকান্দাইল এলাকার আইডিয়াল কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষক হারুন মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের নিজেদের কোনো শহীদ মিনার নেই। তবে পাশে উচ্চ বিদ্যালয়ে আছে। সেখানেই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।
বাগবেড় এলাকার কর্ডোভা প্রি-ক্যাডেট এন্ড হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ বলেন, শহীদ মিনার নেই। তবে পরিকল্পনা রয়েছে শহীদ মিনার তৈরির। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ৩৪টি। এগুলোর মধ্যে ২/৩টি ছাড়া বাকিগুলোতে শহীদ মিনার রয়েছে।
গণবাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শফিউল্লা মিয়া বলেন, স্কুলে স্থায়ী কোন শহীদ মিনার নেই। ২১ ফেব্রুয়ারী আসলেই যত সমস্যা। তাৎক্ষণিক ইট দিয়ে শহীদ মিনার বানানো হয়। সেখানে ছাত্র-ছাত্রীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করে, পরে ইট সরিয়ে নেওয়া হয়। এবারো ছাত্র/ছাত্রীরা উদ্যোগী হয়ে তেমন একটি শহিদ মিনার তৈরী করেছে। শহীদ মিনারের জন্য সরকারীভাবে কয়েকবার স্কুলের লিষ্ট নিয়েছিল, কিন্তু কেন জানি হচ্ছে না। উপজেলার ১০টি কলেজের মধ্যে শহীদ মিনার রয়েছে ৬টির।
দাউদপুরের নুরুননেছা কলেজের অধ্যক্ষ সাত্তার খান বলেন, শহীদ মিনার থাকলেও না থাকার মতো। নিজেদের উদ্যোগে করা হয়েছিল কয়েক বছর আগে, এখন ভগ্নদশা।
বিরাব আব্দুল আজিজ মিয়া আয়েশা খাতুন কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ শাহজামান বলেন, কলেজে ছাত্রছাত্রী নেই, শহিদ মিনার কি করে থাকবে। এছাড়া তারাব পৌর শহীদ মিনার ও উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার রয়েছে একটি করে।
এসব প্রসঙ্গে কথা হয় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শফিকুর রহমান সরকারের সাথে তিনি বলেন, সরকারি বরাদ্ধ না থাকায় স্কুলে স্কুলে শহীদ মিনার নির্মান করা হয়ে উঠছেনা। আমাদের প্রাথমিক পর্যায়ে যে কয়টি শহীদ মিনার রয়েছে সবগুলোই ব্যক্তি উদ্যোগে করা।
রূপগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বলেন, রূপগঞ্জের শহীদ মিনারের সল্পতা রয়েছে এটি সত্য। উপজেলার বিভিন্ন খাত থেকে একটি অংশ রাখা উচিৎ, প্রতিটি স্কুলে শহীদ মিনার বানানোর জন্য। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারহানা ইসলাম বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারী পালন করা প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য বাধ্যতামূলক। সরকারীভাবে কোন সঠিক কোন নির্দেশ বা বরাদ্ধ নেই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার তৈরী করার। যদি নির্দেশ পাওয়া যায় তাহলে হয়তো করা যেতো।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শাজাহান ভূইয়া বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারী এখন আন্তজার্তিক মাতৃভাষা হিসাবে সারা বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে। প্রতিবছর একুশের চেতনা আমাদের জাগিয়ে তোলে। আমাদের উচিৎ একুশকে সমাজের সর্বত্র পৌছে দেওয়া। প্রতিটি স্কুল-মাদ্রাসা-কলেজ এমনকি ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে শহীদ মিনার তৈরি করা। আমরা আমাদের সাধ্যনুসারে গত কয়েক বছরে বেশ কটি শহিদ মিনার তৈরী করেছি। আগামীতে আরো বড় বাজেট বের করা হবে শুধুমাত্র শহিদ মিনার নির্মানের জন্য।

Post a Comment

 



Copyright © 2013 যুগের নারায়ণগঞ্জ
ওয়েব ডিজাইন ডেভেলপমেন্ট ও থিম ডিজাইন : নাজমুল হাসান সিয়াম ও মাহমুদুল হাসান By যোগাযোগ 01712934841,01791011727. Powered by সিয়াম